চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি বিদেশীদের হাতেই যাচ্ছে !

- ডেস্ক রিপোর্ট:
- 01 Jul, 2025
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশীদের হাতেই যাচ্ছে! বিদেশীদের হাতে ছেড়ে দেয়ার আগে টার্মিনালটি ছয় মাসের জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে, এমন তথ্য জানালেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার আগে এনসিটি ছয় মাসের জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে।’ আর নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরই সিদ্ধান্ত নেবে, কারা এটি পরিচালনা করবে। তবে দরপত্র আহ্বান করা হবে না। এটা হবে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে এবং ছয় মাসের জন্য। আগামীকাল বুধবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’
মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুপুরে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এ কথা জানান। পরে বিষয়টি নিয়ে নৌপরিবহন উপদেষ্টাও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালকে লাভজনক হিসাবে আখ্যা দিয়ে বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়ার বিরোধীতা করে আসছে। এরমধ্যে বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম লংমার্চ করেছে। শ্রমিক- কর্মচারী ঐক্য পরিশোধ বন্দর ভবনে সমাবেশ করে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে। বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলও বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়ার প্রতিবাদের বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করেছে।
এনসিটি টার্মিনাল প্রায় ১৭ বছর ধরে দেশীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে এনসিটি পরিচালনাকারী সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৬ জুলাই।
এই টার্মিনালে জেটি আছে পাঁচটি। এসব জেটিতে চারটি সমুদ্রগ্রামী জাহাজ এবং অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী একটি জাহাজ ভিড়তে পারে। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় টার্মিনাল। জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানো, স্থানান্তরসহ নানা কাজ হয় এখানে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৭ জুলাই থেকে নৌবাহিনীকে এই টার্মিনাল পরিচালনার ভার দেওয়া হতে পারে। বন্দরের সহায়তায় নৌবাহিনী আগামী ছয় মাস টার্মিনালটি পরিচালনা করবে।
এর আগে গত ১৮ জুন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক সভায় টার্মিনালটি বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এ জন্য মাসে ৭ কোটি করে ৬ মাসের জন্য ৪২ কোটি টাকা খরচের সরকারি অনুমোদনের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে বন্দর এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
গত শনিবার নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বন্দর কর্মকর্তাদের বৈঠকে বন্দরের সহায়তায় নৌবাহিনীর মাধ্যমে টার্মিনালটি পরিচালনার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। বন্দর ভবনের সম্মেলনকক্ষে সেই বৈঠক হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকার সেই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী নভেম্বর মাসে চুক্তি হবে।
বিশ্বব্যাংকের সহযোগী ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) এই টার্মিনালে ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার বা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে। সেই চুক্তির আগ পর্যন্ত টার্মিনালের পরিচালনার ভার থাকতে পারে নৌবাহিনীর হাতে।
এদিকে বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাধারন সম্পাদক হুমায়ুন কবির এনসিটিতে বিদেশী আপারেটর নিয়োগের সিদ্ধান্ত থেকে সরকার ও কর্তৃপক্ষকে সরে আসার আহবান জানান। অন্যথায় দূর্বার আন্দোলনের মাধ্যেমে তা প্রতিহত করা হবে বলে ঘোষণা দেন।
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
